সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২২

সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সোনার তরী কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা। সোনার তরী' কবিতাটি বহুবছর ধরে নানা আলোচনা ও নানা ধরনের ব্যাখ্যায় নতুনভাবে তাৎপর্য অভিষিক্ত হয়। সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে আলোচনা করব আজকে।

সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পড়ার আগে সোনার তরী কবিতার mcq ও সোনার তরী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন করলে অনেক উপকার হবে। সোনার তরী কবিতার mcq গুলো আগে পরে নিলে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে সুবিধা হবে।

সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা বুঝতে পারলে সৃজনশীল প্রশ্ন লেখা অনেক সুবিধা হবে। তাই আগে আমরা সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা পড়ব। তারপরে সোনার তরী কবিতার mcq এবং সোনারতরী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন নিয়ে হালকা আলোচনা করে সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন পড়ব।
সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা আগে পড়ে নিলে কবিতাটি বুঝতে সুবিধা হবে। সোনার তরী' কবিতাটি ভালোভাবে বুঝতে পারলে সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন এবং উত্তর লেখা খুবই সহজ হয়ে যাবে। এবং পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যাবে।

সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা

সোনার তরী' কবিতায় দেখা যায় একজন কৃষক তার উৎপন্ন সোনার ধান নিয়ে প্রবল স্রোতের মাঝে নদীর ধারে বসে আছেন। আকাশে ঘন ঘন মেঘ ভারী বর্ষণের আভাস এবং নদীর খরা স্রোতে হিংস্র হয়ে উঠেছে। নদীর বাঁকা জল সৃষ্টি করেছে বিপদের আশঙ্কা, সে আশঙ্কায় আছে তার উৎপন্ন সোনার ধান নিয়ে সে পৌঁছাতে পারবে কিনা।

সোনার তরী নিয়ে আসা একজন ম্যাজিকে এমন সময় সে  দেখতে পায়। উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কা নিয়ে সে মাঝিকে তার উৎপন্ন সোনার ধান ও তাকে তীরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য 
আকুল আবেদন করে। সোনার তরীর মাঝি তার উৎপন্ন করে নিয়ে চলে যায়, কিন্তু সোনার তরী খুব ছোট হওয়ার কারণে তাকে নেওয়া হয় না। ফলে সে সেই নদীর তীরেই রয়ে যায়।

সোনার তরী কবিতায় নিবিড় ভাবে মানুষের জীবন আদর্শ মিশে আছে। মহাকালের স্রোতে জীবন যৌবন ভেসে যায়। কিন্তু বেঁচে থাকে মানুষের অমর কৃতিত্ব অর্থাৎ মানুষ যে ভালো কাজগুলো করে সেগুলো রয়ে যায়। মানুষ মারা যায় কিন্তু সেই পৃথিবীতে যে ভাল কাজ গুলো রেখে যায় সেই ভালো কাজগুলো অমর হয়ে থাকে। সেই ভাল কাজগুলো তার কৃতিত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরে। সোনার তরী কবিতা এটাই বুঝানো হয়েছে যে মানুষ মরে গেলেও তার অমর কৃতিত্ব পৃথিবীতে রয়ে যায়, যা তাকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখে মানুষের মনে।

সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো এবার ভালোভাবে পড়ে নেব। তাহলে সোনার তরী কবিতার বিষয়বস্তু ভালো হয়ে ক্লিয়ার হয়ে যাবে এবং আমরা প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে পারব।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১:

উদ্দীপক-১: জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে, চিরস্থির কবে নীর, হায়রে জীবন নদে।

উদ্দীপক-২: সেই ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে, মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্বজন।

ক. ‘সোনার তরী' কবিতায় উল্লিখিত মাঝি কীসের প্রতীক?

খ. 'আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরি'— এ উক্তির তাৎপর্য    ব্যখ্যা করো।

গ. উদ্দীপক-১ এর সঙ্গে 'সোনার তরী' কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।

ঘ. “উদ্দীপক-২ এর চেতনা যেন ‘সোনার তরী' কবিতার মূল চেতনাকেই ধারণ করে আছে।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। ৪

                          ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘সোনার তরী' কবিতায় উল্লিখিত মাঝি মহাকালের প্রতীক।

খ. প্রশ্নোক্ত উদ্ভিটির মধ্য দিয়ে কৃষকের কর্মফল সোনার ধানে মহাকালের তরী পরিপূর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

'সোনার তরী' একটি রূপক কবিতা। এ কবিতায় কৃষকরূপী শিল্পস্রষ্টা কবি তাঁর সৃষ্টিকর্ম সোনার ধান নিয়ে মহাকালরূপী তরীর প্রতীক্ষায় ছিলেন । তরী আসার পর ধানরূপী তাঁর সমস্ত কর্ম সেখানে তুলে দেন। এ সময় তিনি উপলব্ধি করেন তাঁরই কর্মের ভারে পূর্ণ তরীতে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার মতো স্থান অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ তরীরূপী মহাকাল শুধু ফসল অর্থাৎ মানুষের কর্মকেই গ্রহণ করবে, ব্যক্তি মানুষকে নয়। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে।

গ. উদ্দীপক-১ এ ‘সোনার তরী' কবিতায় প্রকাশিত কবির মৃত্যুচেতনার দিকটির সাদৃশ্য ফুটে উঠেছে।

আলোচ্য কবিতায় নিবিড়ভাবে মিশে আছে কবির জীবনদর্শন। এ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন, মহাকালের স্রোতে মানুষের জীবন যৌবন ভেসে যায়, কিন্তু বেঁচে থাকে মানুষের সৃষ্টিকর্ম। মানুষের কর্ম পৃথিবীতে স্থান লাভ করলেও তার ব্যক্তিসত্তা ও শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার। অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর অনিবার্যতার কথাই এখানে উঠে এসেছে।

উদ্দীপক-১ এর কবিতাংশে মৃত্যু নিয়ে কবির উপলব্ধির কথা প্রকাশিত হয়েছে। এখানে মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহাত্বের দিকটি উঠে এসেছে। জীবনকে তুলনা করা হয়েছে একটি নদীর সঙ্গে, যার পানি কখনো স্থির থাকে না। প্রতিটি জীবকেই জন্মগ্রহণ করলে যে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে সেই সত্যই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে মৃত্যুর অনিবার্যতার পাশাপাশি এর কাছে মানুষের অসহাত্বের দিকটিও প্রকাশ পেয়েছে। যেমনটি প্রকাশ পেয়েছে ‘সোনার তরী' কবিতার কবির ভাবনায়। আলোচ্য কবিতায় মহাকালের স্রোতে ব্যক্তিমানুষের বিলীন। হওয়ার কথাতে এ বিষয়টিই মূর্ত হয়ে উঠেছে। সুতরাং উদ্দীপক-১ এ 'সোনার তরী' কবিতায় প্রকাশিত কবির মৃত্যুচেতনার দিকটির সাদৃশ্য ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপক-২ এর কবিতাংশে ব্যক্তির কর্মের মাধ্যমে মানুষের মনে অমরত্ব লাভের দিকটি উঠে এসেছে, যা 'সোনার তরী' কবিতার মূল চেতনাকেই তুলে ধরে।

‘সোনার তরী' কবিতায় কবি তাঁর এক গভীর জীবনদর্শন আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, মহাকালের স্রোতে মানুষকে একদিন বিলীন হতে ববেই; কিন্তু তার কৃতকর্মের কোনো বিনাশ নেই। অর্থাৎ মানুষ মরণশীল হলেও তার সৃষ্ট কর্ম অবিনশ্বর। রূপকের আড়ালে কবি আমাদের এই সত্যই বলতে চেয়েছেন।

উদ্দীপক-২ এর কবিতাংশে কবি আমাদের সামনে অমরত্ব লাভের উপায় বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, সেই সকল মানুষের জীবন ধন্য যাঁরা মৃত্যুবরণ করলেও তাঁদের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। মানুষের মনের মধ্যে তাঁরা সবসময় সম্মানের সাথে বিরাজ করে। ঠিক এমনই এক সত্যের সন্ধান আমরা পাই 'সোনার তরী' কবিতায়।

‘সোনার তরী' কবিতায় কবির যে জীবনদর্শন প্রকাশ পেয়েছে তা হলো। ব্যক্তিমানুষের পৃথিবীতে টিকে থাকা সম্ভব না হলেও তার মহৎ কর্ম টিকে থাকে। অর্থাৎ মহৎ সৃষ্টিকর্ম কালের খেয়াতে স্থান পেলেও স্রষ্টাকে অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় মহাকালের স্রোতে বিলীন হওয়ার জন্য। মানুষকে তার কর্মময় জীবনের সকল অর্জন ফেলে একদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। পৃথিবীতে তার অর্জিত কর্মই টিকে থাকে। একইভাবে উদ্দীপক-২ এর কবিতাংশে মানুষের মাঝে অমরত্ব লাভের দিকটি উঠে এসেছে। এখানে কবি সেই সমস্ত ব্যক্তির জীবনকে ধন্য বলেছেন যাদের মৃত্যুর পরেও মানুষ ভুলে না। অর্থাৎ পৃথিবীতে তারা বেঁচে না থাকলেও তাদের সৃষ্টিকর্মই তাদের বাঁচিয়ে রাখে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটিকে যথার্থই বলা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২:

'নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। 
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে। 
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর 
আউশের খেত জলে ভরভর, 
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।।

ক. শূন্য নদীর তীরে কে পড়ে রইল?

খ. ‘ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?'— কৃষক কেন এরূপ বলেছেন?

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী' কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী' কবিতার আংশিক ভাবকে তুলে ধরেছে; সমগ্রভাব নয়”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।


                          ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. শূন্য নদীর তীরে কৃষক পড়ে রইল।

খ. পাকা ফসল নিয়ে বিপন্ন কৃষক নদীতে তরী বেয়ে যাওয়া মাঝিকে দেখে তার গন্তব্য সম্পর্কে উদ্ধৃত প্রশ্ন করেছেন, যাতে তিনি তাঁর সোনার ফসল তরীতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

উদ্ধৃত উক্তিটির মাধ্যমে কৃষক নৌকার মাঝির গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বর্ষার মধ্যে কৃষক তাঁর খেতের ধান কাটতে কাটতে চারদিক জলপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে কৃষক তাঁর ফসল নিয়ে নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এমন সময় তিনি দেখতে পান এক মাঝি নৌকা নিয়ে আসছে এবং তাঁকে চেনা বলে মনে হওয়ায় কৃষক তাকে সাহায্যের আশায় ডেকেছেন।

গ. উদ্দীপকে 'সোনার তরী' কবিতায় বর্ণিত বর্ষার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে।

‘সোনার তরী' কবিতায় গ্রামীণ প্রকৃতিতে নিঃসঙ্গ এক কৃষকের রূপকে মানুষের চিরন্তন অসহায়ত্বের দিকটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে কবি বর্ষার প্রকৃতিকে আশ্রয় করেছেন। কবিতাটিতে দ্বীপসদৃশ ছোটো খেতে আশঙ্কা নিয়ে অপেক্ষমাণ কৃষকের বর্ণনা, মেঘের গর্জন, চারপাশে বাঁকা জলের বিস্তার প্রভৃতি অনুষঙ্গের ভেতর দিয়ে কবি বাংলায় বর্ষার চিরায়ত রূপটিকেই যেন উন্মোচন করেছেন।

উদ্দীপকের কবিতাংশে বর্ষাকালের একটি সাধারণ চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। জীবনের গভীরতর দর্শন না থাকলেও আলোচ্য কবিতাংশটি বর্ষার এক অনিন্দ্যসুন্দর রূপকল্প ফুটিয়ে তুলেছে। এখানে কবি বর্ষাকালীন আকাশ, আউশের খেত, দিগন্তের আঁধার প্রভৃতির বিবরণ দিয়েছেন। এছাড়া ছোটো ছেলেমেয়েরা বর্ষায় যাতে বাইরে না যায়, সে জন্য তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, 'সোনার তরী' কবিতায়ও বর্ষাকালের চিরন্তন রূপটিই প্রতিভাত হয়। এভাবেই বর্ষা ঋতুর বর্ণনার মধ্য দিয়ে আলোচ্য কবিতা এবং উদ্দীপকের কবিতাংশে শাশ্বত বর্ষার স্বরূপ যেন বাণীরূপ পেয়েছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের কবিতাংশে আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত বর্ষার মনোমুগ্ধকর চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি কেবল বর্ষার শাশ্বত রূপের পরিচয় তুলে ধরার সূত্রে ‘সোনার তরী' কবিতার আংশিক ভাষকে উপস্থাপন করে।

‘সোনার তরী' কবিতায় রূপকের অন্তরালে বাংলার বর্ষার এক অনন্যসাধারণ রূপকল্প অঙ্কিত হয়েছে। এ কবিতার ভাবসত্যকে উন্মোচন করতে গিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন বর্ষার রূপকের। আকাশে ঘন মেঘের গর্জন, দ্বীপের মতো জলবেষ্টিত ছোটো খেতটির বিলীয়মান অবস্থা, বৃষ্টিতে কৃষকের নিঃসঙ্গ অবস্থা— এ সবকিছুই বর্ষার অত্যন্ত সাধারণ চিত্র। তবে কবিতার মূলভাব আরও গভীরে প্রোথিত।

উদ্দীপকের কবিতাংশের কবিচিও পুলকিত হয়েছে বর্ষার রূপ দেখে। এখানে ফুটে উঠেছে বর্ষার শান্ত-স্নিগ্ধ, শ্যামল রূপ। নীল নবঘনে আষাঢ়ের যে গগন, তার মাঝে ফুটে উঠেছে সজীব স্নিগ্ধতার আবেশ। এখানে বৈরী আবহাওয়ায় বর্ষার বিপন্ন জীবন উপস্থাপিত হলেও কৰিচিত্ত পুলকিত হয়েছে মূলত বর্ষার অপরূপ সৌন্দর্যে। আলোচ্য 'সোনার তরী' কবিতাতেও কবি বর্ষার বৈরী প্রকৃতির রূপক ব্যঞ্জনায় জীবন ও কর্মের গূঢ় মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতায় এবং উদ্দীপকে ধরা দিয়েছে বর্ষার রুদ্র ও শান্ত বিপরীত ধারার দুই রূপ।

‘সোনার তরী' কবিতায় আমরা বর্ষার রুদ্ররূপটিই প্রত্যক্ষ করি। এখানে কবি নদীর স্রোতকে ‘ক্ষুরধারা' অর্থাৎ ক্ষুরের ধারার মতো ধারালো হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আবার জলবেষ্টিত ছোটো খেতটির বিলীয়মান অবস্থার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন, তা আমাদের মনে আশঙ্কার জন্ম দেয়। তবে এ সবকিছুর অন্তরালে কবিতাটির ভাবসত্য হলো মানুষের জীবনের অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু; যাকে কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব নয়। কবি মনে করেন, শিল্পস্রষ্টা ব্যক্তির মৃত্যু হলেও তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে না। আর তা বেঁচে থাকে কালান্তরেও। উদ্দীপকের কবিতাংশে বর্ষা প্রকৃতির চিত্র উঠে এলেও আলোচ্য কবিতার এই জীবনদর্শনের উল্লেখ সেখানে নেই। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩:

 তুষারদের বিশাল বাড়িটি তার বাবার দাদা বানিয়েছিলেন। বাজারে তাদের একটি বিশাল দোকান আছে, সেটি তার দাদার আমলের। তার বাবার এক চাচি ছিলেন, যিনি খুব সুন্দর নকশিকাঁথা সেলাই করতেন, সেসবের কিছু এখনো ঘরে আছে। তুষারের কাছে তাঁরা স্বপ্নের মানুষ। সে ভাবে, তাঁদের সবাই যদি এখনো বেঁচে থাকতেন তবে কেমন হতো! এটা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তার বড়ো ভাই রোমেল বলে, তাহলে মানুষে মানুষে ভরে যেত ঘর, জায়গাই দেওয়া যেত না; তখন তোমার আর তাঁদেরকে স্বপ্নের মানুষও মনে হতো না।'

ক. ‘সোনার তরী' কবিতার পূর্ণ পর্ব কত মাত্রার?

খ. শূন্য নদীর তীরে/ রহিনু পড়ি'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে 'সোনার তরী' কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী' কবিতার সমগ্রতাকে ধারণ করতে পেরেছে কি? মতামত দাও।
   

ক.  ‘সোনার তরী' কবিতার পূর্ণ পর্ব ৮ মাত্রার।

খ. যে প্রশ্নোক্ত চরণটির মধ্যদিয়ে মহাকালের কাছে ব্যক্তিমানুষের চিরন্তন অসহায়ত্বের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

আলোচ্য কবিতায় এক নিঃসঙ্গ কৃষকের রূপকে কবি জীবনের এক

গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। মহাকাল কৃষকের কর্মফলের প্রতীক সোনার ধানকে গ্রহণ করলেও তাঁকে গ্রহণ করে না। ফলে অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় মহাকালের শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে শূন্য নদীর তীরে কৃষকের পড়ে থাকার চিত্র উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে কবি এ বিষয়টিকেই উপস্থাপন করেছেন।

গ. উদ্দীপকে 'সোনার তরী' কবিতায় ব্যক্ত কর্মফলের অমরতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

‘সোনার তরী' কবিতায় অন্তলীন হয়ে আছে একটি জীবনদর্শন। মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ অনিবার্য বিদায়কে এড়াতে পারে না, কেবল টিকে থাকে তার সৃষ্ট সোনার ফসল। কবির সৃষ্টিকর্ম মহাকালের সোনার তরীতে স্থান পেলেও ব্যক্তিকবির স্থান সে তরীতে হয় না। এক অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় অনিবার্যভাবে মহাকালের শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য। মহাকালরূপ ‘সোনার তরী' শুধু মানুষের কর্মকেই বাঁচিয়ে রাখে।

উদ্দীপকের তুষার চিন্তা করে যে, দাদা, তার দাদা ও বাবার চাচি যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো খুব ভালো হতো। কারণ বাবার দাদা তাদের জন্য একটি বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন, তার নিজের দাদা বাজারে একটি বিশাল দোকান বানিয়েছেন আবার তার বাবার চাচি সুন্দর সুন্দর নকশিকাঁথা সেলাই করেছেন। তাঁদের কর্ম অক্ষত আছে পৃথিবীর বুকে, যা দেখে তুষার স্বপ্নে বিভোর হয়। অর্থাৎ মানুষ মারা গেলেও তার কর্মের মৃত্যু নেই। 'সোনার তরী' কবিতায়ও ব্যক্তি মানুষের মৃত্যুর বিপরীতে কর্মফলের অমরতার কথা বলা হয়েছে। বস্তুত, মহাকালের স্রোতে মানুষের মহৎ কর্মই শুধু বেঁচে থাকে; ব্যক্তিমানুষ নয়। উদ্দীপকের তুষারের পূর্বপুরুষদের অবদানের মধ্য দিয়ে আলোচ্য কবিতার এই জীবনদর্শনই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ.  উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী' কবিতার সমগ্রতাকে ধারণ করতে পারেনি।

‘সোনার তরী' কবিতায় রূপকের আশ্রয়ে মানবজীবনের গূঢ় দর্শন প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতায় বাহ্যরূপে বর্ষার হিংস্র স্রোত পরিবেষ্টিত ধানখেতে রাশি রাশি সোনার ধান নিয়ে অপেক্ষা করেন এক কৃষক। একসময় ভরা পালে সোনার তরী বেয়ে চলে যেতে থাকা এক মাঝিকে ধানগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য কাতর অনুনয় করে তিনি। মাঝি তাঁর ধানগুলো তরীতে তুলে নেয়; কিন্তু ব্যক্তি কৃষকের সেখানে স্থান হয় না।

উদ্দীপকের তুষার তার পূর্বপুরুষদের কর্ম দেখে কৃতজ্ঞতাভরে তাঁদের স্মরণ করে। তার কাছে তাঁরা স্বপ্নের মানুষ। তুষার মনে করে, এখন যদি তাঁরা বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো খুব ভালো হতো। তুষারের ভুল ভেঙে দেয় তার বড়ো ভাই রোমেল। সে বলে, তাঁরা যদি এখন বেঁচে থাকতেন তাহলে মানুষে মানুষে ঘর ভরে যেত। তখন আর তাঁরা স্বপ্নের মানুষ হতে পারতেন না। তাঁদের সৃষ্টি কর্ম পরবর্তী প্রজন্মের কাছে থেকে গেলেও তাঁদের আলোচ্য কবিতার কৃষকের মতো শূন্য হাতে চলে যেতে হয়েছে।

‘সোনার তরী' কবিতার অন্তলীন দর্শন হচ্ছে মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকে এড়াতে পারে না, কেবল টিকে থাকে তার সৃষ্ট সোনার ফসল। সংগত কারণেই এক অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে হয় অনিবার্যভাবে মহাকালের শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য। উদ্দীপকের তুষারের পূর্বপুরুষদের অবদানের ভেতর দিয়ে আলোচ্য কবিতার এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তবে এছাড়া কবিতাটিতে কবি গ্রামীণ পটভূমিতে বর্ষা প্রকৃতির অনন্যসাধারণ চিত্র পা এঁকেছেন। উদ্দীপকে এর উল্লেখ নেই। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার সমগ্রতাকে ধারণ করতে পারেনি।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪:

 i. মৃত্যু কী সহজ, কী নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়। – সমরেশ মজুমদার -

ii. মৃত্যু নিয়ে আমি ভীত নই। কিন্তু মরার জন্য তাড়াও নেই আমার। তার আগে করার মতো অনেক কিছু আছে আমার। —স্টিফেন হকিং

ক. নিরুপায় ঢেউগুলি কোথায় ভাঙে?

খ “যাহা লয়ে ছিনু ভুলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপক ।-এ ‘সোনার তরী' কবিতার কোন দিকটি উন্মোচিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. “উদ্দীপক ii-এ সোনার তরী' কবিতার বিপরীত ভাব প্রকাশিত হয়েছে”– মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।


৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক নিরুপায় ঢেউগুলি তরীর দু'ধারে ভাঙে।

খ. প্রশ্নোক্ত উদ্ভিটির মাধ্যমে কবির সৃষ্টিকর্ম নিয়ে জীবনভর মগ্ন থাক দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।

কবির সৃষ্টিকর্মই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু সৃষ্টিশীল কবির দৃষ্টিতে শিল্পসাধনাতেই তিনি তাঁর সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছেন। শিল্পকে মগ্ন থাকার কারণে আর কিছু নিয়ে ভাবার তেমন সময় পাননি। অর্থ শেষবেলায় মহাকালের খেয়ায় সেসব সৃষ্টিকর্মের স্থান হলেও তিনি নিজে সেখানে স্থান পাননি। সংগত কারণেই সারাজীবন সৃষ্টিকর্ম নিে মগ্ন থাকার কথা তিনি আক্ষেপভরে প্রকাশ করেছেন। প্রশ্নোক্ত কথাটি মাধ্যমে এ বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে।

গ. উদ্দীপক i-এ ‘সোনার তরী' কবিতায় প্রকাশিত মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহায়ত্বের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

মহাকালের গতিকে কেউ স্তব্ধ করতে পারে না। আর তাই মানুষ তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকেও এড়াতে পারে না। নির্দয়ের মতো ছুটে চলা কালস্রোত কেবল মানুষের সুকৃতিময় কর্মফলকেই গ্রহণ করে, ব্যক্তিমানুষকে নয়। সংগত কারণেই অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে মানুষে অপেক্ষা করতে হয় মহাকালের স্রোতে বিলীন হওয়ার জন্য।

উদ্দীপক ।-এ প্রখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদারের একটি উদ্ভিকে উপজীব্য করা হয়েছে। উদ্ভিটিতে মৃত্যু নিয়ে তাঁর উপলব্ধির কথা প্রকাশিত হয়েছে। আশ্চর্য হয়ে তিনি মৃত্যুর সহজ ও আকস্মিক আগমনকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি আরও অবাক হয়েছেন নিশ্চিত পরিণতি হিসেবে মৃত্যুর কথা জেনেও মানুষ জীবন নিয়ে গর্ব করে যায় দেখে। এর মধ্য দিয়ে মৃত্যুর অনিবার্যতার পাশাপাশি এর কাছে মানুষের চিরন্তন অসহায়ত্বের দিকটিও ফুটে উঠেছে। আলোচ্য কবিতাটিতেও মহাকালের স্রোতে ব্যক্তিমানুষের বিলীন হওয়ার ইঙ্গিতে একই বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপক ।-এ 'সোনার তরী' কবিতায় প্রকাশিত মতার কাছে মানুষের অসহায়ত্বের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

ঘ. ‘সোনার তরী' কবিতায় মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও উদ্দীপক ii-এ মৃত্যুভয়হীন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।

‘সোনার তরী' কবিতায় কবি এক গভীর জীবনসত্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। আর তা হলো- সময়ের স্রোতে ব্যক্তিমানুষ একসময় হারিয়ে যান; বেঁচে থাকে কেবল তার সুকৃতি। আর তাই মহাকালের তরীতে সৃষ্টিশীল কর্ম ঠাঁই পেলেও শিল্পস্রষ্টার সেখানে জায়গা হয় না। বস্তুত, শতচেষ্টা করেও মানুষ তাঁর অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকে এড়াতে পারেন না।

উদ্দীপক ii-এ বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু সম্পর্কিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বক্তব্যটির মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন ও মৃত্যু বিষয়ক ভাবনা ফুটে উঠেছে। জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে মৃত্যুর বিষয়টিকে তিনি সহজভাবেই গ্রহণ করেছেন। মৃত্যুভয়ে ভীত নন তিনি। আর তাই মৃত্যুর কথা না ভেবে তিনি বরং কর্মে মনোযোগী হতে আগ্রহী। তিনি মনে করেন, এখনো তাঁর হাতে করার মতো প্রচুর কাজ রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে সেগুলো সমাধা করাই বেশি জরুরি।

‘সোনার তরী' কবিতায় নিঃসঙ্গ কৃষকের জীবনের পরিণতির মধ্য দিয়ে ব্যক্তিমানুষের অনিবার্য পরিণতিকে নির্দেশ করেছেন কবি। মানুষ কোনোভাবেই মৃত্যুর এই অনিবার্যতাকে এড়াতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে কালের নিয়মের কাছে ব্যক্তিমানুষের চিরায়ত অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। পক্ষান্তরে, উদ্দীপক ii-এ উল্লিখিত স্টিফেন হকিং মৃত্যুভয়হীন। মৃত্যুকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে আলোচ্য | কবিতার মতো মৃত্যুর কাছে নিজেকে অসহায় মনে করেননি তিনি। উদ্দীপক ii-এর এই বক্তব্য আলোচ্য কবিতার বিপরীত। সে বিবেচনায় প্রশোক সমরাটি সম্রাথ অর্থবহ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫:

 রূপক কবিতায় ভাববস্তুর দুটো দিক থাকে। একটি হলো আপাতদৃষ্ট ভাববস্তু। অন্যটি হলো অন্ত র্নিহিত সমান্তরাল ভাব। অর্থাৎ রূপক কবিতায় বাইরের অর্থ হচ্ছে বাচ্যার্থ, আর অন্তনির্হিত অর্থ হলো নিহিতার্থ। সুতরাং রূপক কবিতা হচ্ছে বাইরের রূপের আড়ালে ভেতরের রূপের আভাসদানকারী কবিতা। 'পাঞ্জেরী' এ ধরনের একটি রূপক কবিতা।

ক. 'সোনার তরী' কবিতায় উল্লিখিত মাঝি কীসের প্রতীক?

খ. ঢেউগুলি নিরুপায়, ভাঙে দু ধারে’ – ব্যাখ্যা করো। 

গ. উদ্দীপকে যে আপাতদৃষ্ট ভাবের কথা বলা হয়েছে, 'সোনার তরী' কবিতায় তা কীভাবে রূপায়িত হয়েছে? আলোচনা করো। 

ঘ. রূপক কবিতা হিসেবে ‘সোনার তরী' কবিতার সার্থকতা বিচার করো।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘সোনার তরী' কবিতায় উল্লিখিত মাঝি মহাকালের প্রতীক।

খ. ‘ঢেউগুলো নিরুপায়, ভাঙে দু ধারে'— চরণটির মাধ্যমে মহাকালের কালস্রোতের আপন গতিতে সবকিছুকে নস্যাৎ করার কথা বোঝানো হয়েছে।

মহাকাল তার আপন নিয়মে নিরন্তর বয়ে চলছে। কেনো কিছুই তার এই গতিকে স্তব্ধ করতে পারে না। ফলে এই স্রোতে মানুষ তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকে এড়াতে পারে না। নির্দয়ের মতো ছুটে চলা এই কালস্রোত কেবল মানুষের সুকৃতিময় কর্মফলকেই গ্রহণ করে, ব্যক্তি মানুষকে নয়। সংগত কারণেই অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় মহাকালের কালস্রোতে বিলীন হওয়ার জন্য। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে ঢেউগুলোর নিরুপায় ভেঙে পড়ার মধ্যদিয়ে এ বিষয়টিই ইঙ্গিতময় হয়ে ধরা দিয়েছে।

গ. ‘সোনার তরী' কবিতায় আপাতদৃষ্ট ভাবটি হলো- বর্ষাকালীন বৈরী পরিবেশে নিঃসঙ্গ ও বিপন্ন এক কৃষকের অসহায়ত্ব।

‘সোনার তরী' একটি রূপক কবিতা। কবি গ্রামীণ পটভূমিতে এক কৃষকের দূরবস্থার মধ্যদিয়ে কবিতাটির ভাবসত্যকে উপস্থাপন করেছেন। | সংগত কারণেই কবিতাটি দুই রকম ভাবের দ্যোতনা দেয়। উদ্দীপকের বক্তব্য অনুযায়ী এর একটি সাধারণ ভাব বা আপাতদৃষ্ট ভাব; অন্যটি কবিতাটির গূঢ়ার্থ।

উদ্দীপকে রূপক বা প্রতীকধর্মী কবিতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে বর্ণিত রূপক কবিতার দুই ধরনের ভাবের মধ্যে আপাতদৃষ্ট ভাব একটি আলোচ্য কবিতাটিকে সাধারণভাবে চিন্তা  করলে এখানে একটি সরল কাহিনি বিধৃত হয়েছে। যেখানে বর্ষাকালীন পরিবেশে এক কৃষক তাঁর ছোটো খেতের রাশি রাশি ধান কেটে বসে আছেন। কাটা ধান ঘরে তোলাই কৃষকের লক্ষ্য। এমন সময় তাঁর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক অচেনা মাঝির আগমন ঘটে। কৃষকের অনুনয়ে তাঁর সমস্ত ধান সে নৌকায় তুলে নেয়। কিন্তু ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের সেখানে স্থান হয় না। ফলে মনঃকষ্ট নিয়ে তাঁকে শূন্য নদীর তীরেই পড়ে থাকতে হয়। এভাবে বর্ষার চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে উদ্দীপকে উল্লিখিত আপাতদৃষ্ট ভাবটি আলোচ্য কবিতায় রূপায়িত হয়েছে।

ঘ. আপাতদৃষ্ট ভাবের আড়ালে অন্তর্নিহিত ভাব হিসেবে একটি গভীর জীবনদর্শনকে তুলে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে 'সোনার তরী' একটি সার্থক রূপক কবিতা ।

‘সোনার তরী' কবিতায় কবি গ্রামীণ পটভূমিতে এক কৃষকের দুরবস্থাকে কেন্দ্র করে কবিতাটির ভাবসত্যকে উন্মোচন করেছেন। এই ভাবসত্যটি হলো— মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকে এড়াতে পারে না, কেবল টিকে থাকে তার সৃষ্ট সোনার ফসল তথা কর্মফল। কবিতাটিতে মহাকালস্বরূপ মাঝি কর্তৃক কৃষকের সোনার ধান গ্রহণ করা এবং পরিশেষে কৃষকের নদীতীরে বসে থাকা এই অন্তলীন ভাবকেই প্রকাশ করে। উদ্দীপকে রূপক কবিতার বৈশিষ্ট্য উপস্থাপিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে রূপক কবিতায় ভাববস্তুর দুটো দিক থাকে। একটি বাইরের অর্থ অর্থাৎ বাচ্যার্থ, আর অন্যটি অন্তনির্হিত অর্থ অর্থাৎ নিহিতার্থ। অর্থাৎ রূপক কবিতা হচ্ছে বাইরের রূপের আড়ালে ভেতরের রূপের আভাসদানকারী কবিতা। বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সোনার তরী' কবিতাটি প্রতিকূল পরিবেশে এক কৃষকের দুরবস্থা ও অসহায়ত্বকে প্রকাশ করলেও এর গূঢ়ার্থ কবির ব্যক্তিগত জীবনদর্শনে নিবদ্ধ।

‘সোনার তরী' কবিতায় আপাতদৃষ্ট ভাবের সাথে অন্তলীন হয়ে আছে একটি জীবনদর্শন, যা কবিতাটির নিহিতার্থ। এ কবিতায় কৃষক কবির রূপক। কৃষকের ফসল যেমন মাঝি এসে নিয়ে যায়, তেমনি কবির সৃষ্টিকর্ম মহাকালের সোনার তরী এসে নিয়ে যায়, কিন্তু ব্যক্তি কবির সেখানে স্থান হয় না। এভাবে রূপকের আড়ালে কবিতাটিতে মানবজীবনের অনিবার্য সত্য মৃত্যুর অনিবার্যতা এবং কর্মফলের গুরুত্বের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে রূপক কবিতার বৈশিষ্ট্য, যার সাপেক্ষে ‘সোনার তরী' কবিতায় বাইরের রূপের আড়ালে ভেতরের রূপ তথা অন্তর্নিহিত ভাবের আভাস পাওয়া যায়। সে বিবেচনায় ‘সোনার তরী’ একটি সার্থক রূপক কবিতা।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৬:

 আমিন সাহেব ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর চাকরি করেছেন। এই দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি ঘর-বাড়িসহ বেশকিছু অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। অবসর গ্রহণের পর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন তিনি তবে ছেলেমেয়েরা সুখী জীবনযাপন করছে— এতেই তার স্বস্তি।

ক. কাকে দেখে কৃষকের পরিচিত মনে হয়েছে?

খ. কবিতাটিতে ‘পরপার' বলতে মূলত কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 

গ. উদ্দীপকের আমিন সাহেবের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে 'সোনার তরী' কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। 

ঘ. উদ্দীপকটি 'সোনার তরী' কবিতার অন্তর্ভাবনাকে উপস্থাপন করতে পেরেছে কি? বিশ্লেষণ করো

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মাঝিকে দেখে কৃষকের পরিচিত মনে হয়েছে।

খ. কবিতাটিতে 'পরপার" বলতে মূলত পরকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

‘সোনার তরী' একটি রূপক কবিতা। এ কবিতার কৃষক হলেন শিল্পস্রষ্টা  কবি নিজেই। নদীর জল কাল সলিলের প্রতীক আর নদীর অপর পাড় তথা পরপার হলো মৃত্যু পরবর্তী জগৎ। এভাবে 'পরপার' শব্দটির মধ্য দিয়ে কবিতাটিতে পরকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের আমিন সাহেবের কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে 'সোনার তরী' কবিতার কৃষকের কর্মের দিকটি ফুটে উঠেছে।

'সোনার তরী' কবিতার অন্তরালে কবি মানবজীবনের এক গভীর দর্শনকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি মনে করেন, ক্ষণস্থায়ী জীবনকে অমরত্বের রশিতে বাঁধতে হলে সুকীর্তিময় কর্মের বিকল্প নেই। কেননা, শেষ বিচারে কেবল মানুষের কর্মই মূল্যায়িত হয়; ব্যক্তিমানুষ হারিয়ে যায় মহাকালের অতলে। এ কারণেই কবিতাটিতে কৃষকের সোনার ফসল টিকে গেলেও সোনার তরীতে ঠাঁই হয় না কৃষকের।

উদ্দীপকের আমিন সাহেব তাঁর দীর্ঘ চাকরি জীবনে সাংসারিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। অনেক কষ্টে যে সংসার তিনি গড়ে তুলেছেন বর্তমানে তার ধারক-বাহক হচ্ছে তাঁর সন্তান। তারাই আমিন সাহেবের এ কর্মময় জীবনকে সার্থক করবে। একইভাবে, 'সোনার তরী' কবিতাতেও কবি মহৎকর্মের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। সেখানে কৃষকরূপী শিল্পস্রষ্টা সোনার তরীতে জায়গা না পেলেও মহাকালের পঙ্ক্তিতে তাঁর সৃষ্টিকর্ম ঠিকই স্থান পায় অর্থাৎ আলোচ্য কবিতা এবং উদ্দীপক উভয় ক্ষেত্রে কর্মময়তার দিকটিই উঠে এসেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের আমিন সাহেবের কর্মকাণ্ডে 'সোনার তরী' কবিতার কৃষকের কর্মের দিকটিই ফুটে উঠেছে।

ঘ.  উদ্দীপকটি 'সোনার তরী' কবিতায় অন্তর্ভাবনাকে তুলে ধরতে পারেনি বলেই আমি মনে করি।

‘সোনার তরী' কবিতায় কবি এক গভীর জীবনদর্শনকে উন্মোচন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, মহাকাল কেবল মানুষের মহৎ সৃষ্টিশীল কর্মকেই গ্রহণ করে; ব্যক্তিমানুষকে নয়। আর তাই কালপরিক্রমায় সৃষ্টিকর্ম টিকে গেলেও মানুষকে অনিবার্যভাবে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। আলোচ্য কবিতায় কৃষক চরিত্রটির আধারে কবি এ সত্যটিকেই উন্মোচন করেছেন।

উদ্দীপকের আমিন সাহেব একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি তাঁর সংসারকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি বাড়িসহ বেশকিছু অর্থ-সম্পদেরও মালিক হয়েছেন তিনি। অবসর গ্রহণের পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও আক্ষেপ নেই তার। ছেলেমেয়েরা সুখে আছে, এতেই তিনি খুশি। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়ার পর আর কোনো চাওয়া নেই তার। আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তু এর থেকে অনেকটাই ভিন্ন।

‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি বর্ষাকালীন গ্রামীণ প্রকৃতিতে কৃষককে আশ্রয় করে কবিতার সারসত্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। সেখানে কৃষক সৃষ্টিশীল কবিসত্তা, তাঁর উৎপাদিত ফসল | কবির সৃষ্টিকর্ম আর মাঝি মহাকালের প্রতীক। মহাকাল কমি সৃষ্টিকর্মকে গ্রহণ করলেও তাঁকে গ্রহণ করে না। ফলে শূন্য নদীর তীরে | তাঁকে পড়ে থাকতে হয় মহাকালের শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য।। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকে এরূপ কোনো দর্শনের আভাস পাওয়া যায় না। সেখানে আমিন সাহেবের দীর্ঘ কর্মজীবন এবং সংসার নিয়ে তাঁর প্রাপ্তি। কথা ফুটে উঠেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি আলোচ্য অন্তর্ভাবনাকে তুলে ধরতে পারেনি। কবিতার

আমাদের শেষ কথা

সোনার তরী' কবিতাটি মানব জীবন দর্শন নিয়ে রচিত একটি কবিতা। সোনার তরী কবিতায় বলা হয়েছে মানুষ একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু তার অমর কৃতিত্ব পৃথিবীতে রয়ে যাবে। যা তাকে মানুষের সামনে তার কৃতিত্ব তুলে ধরবে। সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন, সোনারতরী কবিতার mcq, সোনারতরী কবিতার ব্যাখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন আশাকরি উপকার হবে। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন

Please Share this On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url